কক্সবাজার, রোববার, ৫ মে ২০২৪

কক্সবাজারে কাজী পরিচয়ে প্রতারণা, অবশেষে গ্রেফতার

শাহীন মাহমুদ রাসেল::
কাজী পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে প্রতারক চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে কক্সবাজার সদর থানা-পুলিশ। বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে শহরের লাল দীঘিরপাড় এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার যুবকের নাম রমিজ কামাল (২৭)। তিনি টেকনাফের হোয়াইক্যং ওরি আমগাছ তলা এলাকার আক্তার কামাল নুরীর ছেলে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়ন ও আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় সরকারের অনুমোদন ছাড়াই বিবাহ নিবন্ধনের নকল বালাম বই ও সীল তৈরি করে বাল্যবিবাহসহ নিকাহ নিবন্ধন করে আসছিলেন এই ভুয়া কাজী রমিজ। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও বাসা বাড়িতে গিয়ে গোপন বিয়ে পড়িয়ে আসছিলেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গ্রেফতার রমিজ কামাল কাজী পরিচয় ও ঘটকালি করে বিয়ে ঠিক করার কথা বলে শত শত পরিবারের কাছ থেকে কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। এরই মধ্যে নিজকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে বিয়ের আশ্বাসে অনেক স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্রীর সাথে প্রতারণাও করেছেন। নিজেকে একেক জায়গায় একেক পরিচয় দিয়ে এপর্যন্ত অনেক নারীর সর্বনাশ করার অভিযোগও অহরহ। তার দুর্দান্ত প্রতারনার কারনে বহু প্রবাসির স্ত্রীর সংসার ভাঙ্গার জনশ্রুতিও রয়েছে। বিয়ের পাশাপাশি সর্বশান্ত করেছে অনেক মেয়ের পরিবারকে। তার বাড়িতে অভিযান চালালে শত শত নকল নিকাহ্ রেজিস্ট্রার বইসহ বহু আলামত জব্দ করা যাবে বলে দাবী স্থানীয়দের।

তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার সদর থানার এসআই মিঠুন। তিনি জানান, কোন রেজিস্ট্রেশন নেই। তিনি বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে বাল্যবিবাহসহ আইন বহির্ভূত বিয়ে পড়িয়ে আসছিলেন। এ ঘটনায় কাজী সাইফুদ্দিন নামে একজন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আগামীকাল আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হবে।

অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন অনেক ভাসমান কাজী। যাদের আইনগত বিয়ে পড়ানোর এখতিয়ার নেই। কাজী হিসেবে নিয়োগ পেতে যেসব যোগ্যতা বা আইনের বিধিবিধান রয়েছে তার কোনোটাই তাদের নেই। এর অধিকাংশই উখিয়া-টেকনাফ এলাকায়।

এছাড়া আশপাশের উপজেলাগুলোর অলিগলিতে কাজী আছে, অফিসও আছে, নিয়মিত বিয়েও পড়াচ্ছেন। আছে বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রার, সরকার নির্ধারিত বালাম বইও। তবে সেটা ভুয়া। তাদের নেই আইনগত কোনো বৈধতাও। সেই সাথে কাজীর নেই সরকারি নিবন্ধনও। তবুও কথিত কাজী পরিচয়েই বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রি করছেন বছরের পর বছর। শুধু পাড়া-মহল্লায় নয়, কক্সবাজার আদালত চত্বরেও চলছে ভুয়া জন্মসনদ, নকল কাবিননামা আর জাল সিল-স্বাক্ষরে বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রি। জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা অপ্রাপ্ত বয়স্কদের নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করে প্রাপ্তবয়স্ক বানিয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রি করা হচ্ছে। নিবন্ধন ছাড়াই ভুয়া বিয়ে রেজিস্ট্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। এসব নামসর্বস্ব কাজীর ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।

আসল ভেবে ভুয়া কাবিননামা, তালাকনামা দাখিল করে সম্পত্তির অধিকার, পিতৃত্ব ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার থেকে বঞ্চিতের ঘটনা ঘটছে অহরহ। তবুও ভুয়া কাজীদের নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই। মাঝে মধ্যে ধরা পড়ে গণমাধ্যমে খবর আসলেও প্রতিকার মিলছে। ফলে পাড়া-মহল্লাতেই ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে কাজী অফিস। বেপরোয়াভাবেই চালাচ্ছেন তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ড।

পাঠকের মতামত: